দেড় বছরের শিশু আব্দুল্লাহর জীবনের প্রথম ঈদে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছিল তার বাবা মোহাম্মাদ মোহিব (৩০)। তবে জীবনের দ্বিতীয় ঈদের আগেই শিশুটি বাবা হারায়। তাই নতুন পোশাক ছাড়াই পার করতে হয়েছে ঈদের দিন। এমনকি জোটেনি খাবার। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে ৪৯ জন যাত্রী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে মোহাম্মাদ মোহিবও রয়েছেন। জানা যায়, ঢাকায় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন মোহিব। বাড়ি ফিরছিলেন ওই লঞ্চে। কিন্তু মাঝরাতে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মুহিব এতোটাই পুড়েছিলেন যে তার মরদেহ শনাক্ত করতে পারেনি স্বজনরা।

আব্দুল্লাহর মা লিপি বেগম বলেন, ‘আব্দুল্লাহ বুঝতেই পারে না, তার বাবা আর নেই। শিশুটি বাবা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে তার জীবন থেকে সব আনন্দ হারিয়ে গেছে। সংসারে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড অভাব। স্বজনরা প্রথমে কিছু খাবার দিয়ে সহায়তা করলেও এখন আর দেয় না। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে তাই অর্ধাহারে-অনাহারে কোনো রকম দিন কাটছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত ঈদ-উল-আযহার সময় ছেলেকে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছিল মোহিব। ডিসেম্বর মাসে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে অভিযান-১০ লঞ্চে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু সেই দেখা আর হলো না।’ ‘লঞ্চে আগুন লাগার পর মোহিব তার বড় ভাই আমিনুলকে ফোন করে বলেছিলেন, ভাইয়া তুমি আমার ছেলেকে দেখে রাইখো। আমি যে কোনো সময় মারা যেতে পারি। আমি আগুনে পুড়ে যাচ্ছি।

এরপর আর কোনো কথা হয়নি।’ লিপি বলেন, ‘মোহিব মারা যাওয়ার সময় ভাইকে বলে গেলেও আব্দুল্লাহ এখন অনাহারে থাকে। অথচ আমার স্বামী ঈদে ঢাকা থেকে আসার সময় তার ভাই-বোনের সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কিনে নিয়ে আসত। যারা একটু অভাবে ছিল তাদের সহায়তা করত। কখনো টাকা জমিয়ে রাখেনি। কিন্তু আজ আমার ছেলে না খেয়ে দিন কাটায়। কেউ একবারের জন্যও খোঁজ নেয় না।’ ‘ঈদে নতুন পোশাকতো দূরের কথা ঘরে কোনো খাবার নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সহায়তা করা হবে। কিন্তু মরদেহ শনাক্ত করতে না পারায় কোনো সহায়তা পাইনি।’ মোহিবের বাবা মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঠিকমতো হাঁটতেই পারি না। কোনো কাজ করে যে ছেলের স্ত্রী ও সন্তানকে দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেবো সেই শক্তিও নেই।

‘আমার স্ত্রী বৃদ্ধা, আমরা এখন মরতে বসেছি। সবাই ঈদে ভালো খাবার খায়, কিন্তু আমরাতো পেটই ভরতে পারি না। মাঝে মধ্যে স্বজনরা কিছু চাল-ডাল দিয়ে সাহায্য করে। কিন্তু তাতে আর কতদিন চলে।’ তিনি আরো বলেন, ‘লঞ্চ দুর্ঘটনার পর শুনেছিলাম ক্ষতিপূরণ পাবে স্বজন হারানো পরিবার। তখন ভেবেছিলাম মোহিবের ছেলে আর স্ত্রী অন্তত দুবেলা ভাত খেতে পারবে। কিন্ত না আমাদের সরকার দিয়েছে, না চেয়ারম্যান-মেম্বাররা দিয়েছে। না কেউ খোঁজ নিয়েছে।’ এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিএনএ রিপোর্ট আসলেই শুরু হবে কবর হস্তান্তর প্রক্রিয়া। সরকারি সহায়তা অবশ্যই করা হবে, তবে কিছু প্রক্রিয়া আছে। মৃতদেহগুলো শনাক্ত করার পরেই ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে সহায়তা করা হবে।